এই বইয়ের কি আদ� পা�-প্রতিক্রিয়া হয�? যদ� হয�, তাহল� কীভাবে তাকে সাজা� বলুন তো? আজ থেকে প্রায় পঁচি� বছ� আগ� এই বইটি� সঙ্গ� আমার প্রথ� সাক্ষা� হয়। "অমৃত কুম্ভে� সন্ধান�" � "শাম্�" উত্ত� সে� সময়� আম� কালকূটের নেশায় ডুবে গেছিলাম। কিন্তু এই বইটি� বিষয়বস্তু আমার কাছে বড়ো� 'অন্যরক�' ঠেকেছিল। জল আর আকাশ, হিন্দুস্তা� � পাকিস্তা�, হিন্দু আর মুসলিম, প্রে� আর প্রতারণা, বিশ্বা� আর বেঁচ� থাকা মিশে যাওয়া� এই অপরূ� আখ্যানের মর্ম আম� সেদি� বুঝিনি� দি� যায়� মে� ছাড়ার সময় কোথায় হারিয়� যায় বইটা� ক্রম� টা� আর মধ্যপ্রদেশ বাড়ে। পড়া-বেকারত্ব-চাকর�-সংসা� সবকিছু� মধ্য দিয়� এস� পৌঁছ� জীবন-নদী� খেয়াঘাটে। মাঝিকে খুঁজ� এই প্রশ্ন নিয়�, "ওপার� কো� দে� গো?" এই সময়, 'নায়�' সিনেমা� সে� একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ চরিত্রের মত� "আম� নয�, আমার soul" পড়ত� চায় এই বইটাকে� আম� বইটা আবার কিনলাম� তারপ� রাতে ঘর� ফিরে ডুবে গেলা� এই আশ্চর্� প্রদীপে, যেখা� থেকে বেরিয়� আস� জ্বিনও জানে না আম� ঠি� কী চাইছ� তা� কাছে� তারপ�... এই উপন্যা� এক অনন্তযাত্রার� যাদে� আমরা শহুর�, শিক্ষি� ভাষায় প্রান্তি� মানু� বল�, তাদে� বিশ্বা�, আচার, সু�-দুঃখ, গা�, কিংবদন্ত� আর আশ�-নিরাশা� মহাকাব্য বল� চল� একে। লেখক এক� ক্ষেত্রসমীক্ষা� নির্মো� ফ্রেমে বাঁধেননি� এই লেখা� পেছন� তাঁর কোনো এজেন্ড� আম� অন্ত� খুঁজ� পাইনি। বর� আম� এত� পেয়েছ� অপার বিস্ময়। এত� আছ� প্রব� বেগে ধাবমান জীবন� পথের বাঁক� ফেলে আস� মানুষদের নিয়� নানা ভাবনার অনুরণন� আর আছ� "জীবন এত ছোটো কেনে?" এই অনুক্ত আক্ষেপ� এই বইয়ের পা�-প্রতিক্রিয়া লেখা� সাধ্� সত্যিই আমার নেই। তা� বইটা, যদ� এখনও না পড়ে থাকে� তাহল� পড়ত� বলার অনুরোধটুকু ছাড়� আমার কিচ্ছু লেখা� নেই। � বই না পড়ল� আপনা� কী হব�, জানি না� তব� পড়া� পর আপনি� লালনের শর� নিয়� হয়ত� গেয়� উঠবে�, "এম� মানব জন� আর কি হব�...?" আর হ্যা�, ঝিনি'� মত� এই বইটা� স্মৃতি� আপনা� কাছে থেকে যাবে অসহ্� সুখে� কষ্ট নিয়ে।
নীললোহিতের দিকশূন্যপু� পড়ে মন� হয়েছি� - আমিও যদ� হারিয়� যেতে পারতাম ! কিন্তু ভাবা� সা�, কাজে� কা� আর কর� হয� না, কিন্তু এই রক� অনেক লো� আছ� ভেবে এক প্রকার শান্তি, এই যা�
কালকূটের এই কাহিনী পড়া শুরু কর� মন� হয়েছি� - সুনীলবাব� নির্ঘা� চুরি করেছিলেন, আর শে� কর� বুঝলাম ভু� ভেবেছিলাম। চলছি� বে�, "দেত্তর� ছা�, কেটে পড়ি" গোছে� কথকে� সাথে এগিয়ে চল� যায় সহজে, ঘো� আস�, কিন্তু মন� হয� ক্ষত� নেই। রহস্� রোমান্ধহী� এক কাহিনী� মাদকতায় ক্ষত� নেই। শেষে মন� হয� সব ভু�, কালকূট না� যে নাহল� বৃথা হয়ে যায়� অমৃত কুম্ভে� মধ্যেই বিষ।
অকারণে অজানার খোঁজ� হারিয়� যাওয়া� এক কাহিনী� কাল্পনিক না বাস্তব জানি না, এখ� শুধু� কালকূটকে আবিষ্কারের আনন্দ।
জীবন বড়ো মায়াময়� তা� অপরূ� খেলা ছড়িয়� থাকে ভারতবর্ষের পথ� প্রান্তরে। গন্তব্যহী� গন্তব্যে� উদ্দেশ্য� পথ চলি। কোথা থেকে এসেছ� জানা নে�, কোথায় যাবো তা� অজানা। এই কাহিনীতে লেখক নিজে� ঘুরে বেড়িয়েছে� অচেন�-অজানার পথেপ্রান্তরে� সাথে আমাকেও ঘুরিয়েছেন� ক্যানি� হয়ে গোসাবা যাবা� পথ� দরিয়া� বাঁধ থেকে সুদূ� উত্ত� পশ্চিমের সুবিস্তৃ� রাঢ়ের ধূলিমলিন রাঙা মাটি� পথ� চোখে� সামন� এক� এক� পা� হয়ে গেছে মৌলীক্ষা� মা�, বক্রেশ্বরে� রাতে� মহাশ্মশা�, শান্তিনিকেতনের পৌ� মেলা, চন্ডীদাসে� জন্মস্থা�, জয়দেবের কেন্দুলী� মেলা, সতীপী� অট্টহাস্যে� মন্দির, হাড়োয়া� পী� গোরাচাঁদের মেলা!! ইছামতী,কোপা�, অজয়, বিদ্যাধরী আর� কত� অজান� নদীনালা যে পা� হয়ে গেলা� তা� ইয়ত্ত� নেই। কত� অজান� মানুষে� সাথে দেখা হয়েছে! কত� বিচিত্� তাদে� জীবন-ধারণ, তাদে� জীবনের গল্প! মুগ্� বিস্ময়ে জোড়হা� কর� ভবের খেলা দেখে বেড়িয়েছি� যা পেয়েছ� তুলে রেখে দিয়েছ� আপ� ঝোলায়! কখনো দরিয়া� বাঁধ� লারা� ঠাকুরে� হোটেলে রাত্রিবা� করতে হয়েছে আবার কখনও রাত্রিযাপন করতে হয়েছে বাউলের আখড়ায� কিংব� তান্ত্রিকে� ঘর�! বিচিত্� তা� অভিজ্ঞতা�.......... ভারতবর্ষের পথ� পথ� সাধক� শুনেছিলা� তাদে� সাথে যে মেয়ের� থাকে তাদে� সাধনসঙ্গিনী বল� হয়। সাধারণ সংসারে� স্বামী-স্ত্রী এর মধ্য� যে আবেগী সম্পর্� থাকে তা তাদে� মধ্য� নেই। তব� আর সাধক-সাধিকা কেনো? সেখানে আছ� শুধু� নির্লিপ্তি, মুক্তি�...................... তব� কেনো গাজি� ফিরে আসার পথ চেয়� অপেক্ষ� কর� তা� সাধনসঙ্গিনী নয়নতারা? কেনো� বা রাঢ়ের ধুলোয় হারিয়� যাওয়া গোকুলে� জন্য চোখে� কোলে মে� নামে বিন্দু�? কো� অমোঘ আকর্ষণ� সে উদাসী হয়ে থাকে দূরে� দিগন্তের দিকে চেয়�? কেনো ভৈরব ব্রক্ষ্মানন্� অবধূ� আশ্র� ছেড়� গেলে তা� ফেরা� পথ চেয়� অপেক্ষ� কর� ভৈরবী যোগমতী? কেনো� বা তা� অনশন? কেনো� বা জন্মদুখিনী বিরাগীনী অলকা অনুসরণ কর� বেড়ায� বিরাগী কালকূটকে?........ জীবনের সু� বেজে যায় নীরব� নিভৃতে! রং বেশভূষ� পরিবর্তি� হত� থাকে শুধু� কখনো তা সাদা থা� কখনো বা গেরুয়� শাড়� কিংব� লা� শাড়�!! প্রাণে� সে� এক� অমোঘ সুরতরঙ্গ বেজে যায় মানব হৃদয়ে� সে� সু�.......ধর্ম জাতি বর্ণ ভেদাভেদে� উর্ধ্ব� গিয়� প্রতিষ্ঠ� দেয় মানুষক�, সমর্পণ শেখায় জীবনের প্রত�!...... নাহল� কেনো হিন্দু বোষ্টুমী নয়নতারা তা� দলছু� হয়ে হাঁট� দেয় মামু� গাজি� সাথে? কেনো বারোবিলাসিনী দুলি অনন্তক� রক্ষ� করতে চেয়� আশ্রয় নেয় মহামায়া হোটেলে? কেনো নীরজ� তা� প্রেমি� অচিনদা কে ফেলে শান্তিনিকেতন ছেড়� পা দেয় সুদূ� কলকাতা� পথ�? কেনো তা� চোখে� জল রুদ্� হয� না? কেনো এক সামান্� তাঁত� বৌ ঘর সংসা� ছেড়� রেখে পালিয়� আস� কার্তি� ঘোষালে� সাধিকা হত�? ........ জানা নেই। জীবনের গল্প শুনি� ঠি� ভু� সঠিক বেঠি� কে দূরে সড়িয়� রেখে জীবনের জয়যাত্র� দেখি! কত� অপূর্ব তা� কাহিনী! রূ� অরূপের দিকে না� বা তাকালা�? ........... দ্বাপর� যে ব্যাথায় বেজেছিলে� শ্রীরাধিকা সে� এক� ব্যাথায় যেনো বেজে চলেছ� ঝিনি, আঙুরলত�, সুষি, দুলি, বিন্দু, যোগমতীরা!........ আম� কেবল মানবলীলা� কাছে নত সমর্পণ� বুকে� কাছে দু হা� জড়ো কর� পথ চল�! মানবলীলা দেখত� দেখত� যাই। জীবনের খেলায় কারো� মূল্� কম নয়। বারোবিলাসীনী দুলি থেকে তাড়� খেয়� বুঁদ হয়ে থাকা রিক্সাচালক, সবাই অমূল্য! এই বিচিত্� সংসারে� খেলাঘর� সবাই যেনো এক মায়াময় ভূমিকা পালন কর� চলেছে।
লেখকের সাথে ঘুরে ঘুরে রাঢ়ের বারোভুঁইয়াদের লোককথা শুনি� বাউলের আখড়ায� গোপীদাসে� মুখে সাধনতত্ত্ব শুনি� তান্ত্রি� ব্রহ্মানন্� অবধূতে� মুখে শুনি তন্ত্রের কথ� শুনি� বুঝিনা কিছু�! শুধু বিস্ময়ে অভিভূত হই!!.... বাকিটা তীব্� আক্ষেপ! সাধক আর হত� পারলাম কই? কেনো গোপীদা� বল� ওঠ�.... "আম� বাউল নই গো বাবু! সারাটা জীবন পথ� প্রান্তর� ঘুরে ঘুরে গা� গেয়েই কাটিয়� দিলাম। বাউল আর হত� পারলাম কোথা?"..... ফকির মামু� গাজি বল� ওঠ� .... "তা বাবু শুনেছো সাধ��ে� কখনো কোনো ছাওয়া� পাওয়া� থাকে? সাধক আর হত� পারলুম কই? মিয়�-বিবি হয়ে� জীবন কেটে গেলো!!"........ তান্ত্রি� অবধূ� বল� ওঠ�..... "ধু� শালো, শশ্মানের কুত্যা� মত� ঘুরে ঘুরে� সারাজীবন কেটে গেলো! সাধন ভজ� আর হল� কই?"..........আম� যেনো লেখকের মত� দেখত� পা�......কোনো ফকির নয�, কোনো বাউল নয�, কোনো তান্ত্রি� নয�, এক নিতান্তই গরী� ভারতবর্ষীকে!
এই বই যতদি� স্মৃতিতে থাকব� ততদি� ঝিনি� জড়িয়� থাকব� জীবনজোড়�! দরিয়া� বুকে যেতে যেতে যে নাগরিকার সাথে দেখা হয়েছিলো কালকূটের, কেনো সে আজীবন অনুসরণ করতে থাকে কালকূটকে? কেনো সে� দার্শনিকার চোখে উজান বেয়� যায় বারবার? মে� এস� থমকে দাঁড়ায় চোখে� কোলে? কেনো সে� শহুর� বিদুষী বারবার কালকূটের কাছে এস� ব্যাক্� কর� নিজে� চোখে� জলকে? চিঠি� উত্ত� না দেওয়ায় কেনো তা� এত� অভিমান? কেনো সে সাহিত্যিকক� ডেকে নিয়� যায় অজয় আর কোপাইয়ে� তীরে নির্জন নিরালায় শুধু একটু মনের কথ� বলবা� জন্য�? "আমাক� তোমা� পায়� একটু শুতে দেবে গো?" বললা� "পায়� কেনো? কোলে� মাথা রাখো!"...... কেনো বারবার ঝিনি ভবঘুরে লেখককে জিগ্যে� কর� ওঠ� "এরপর কোথায় যাবে? " " বাড়� ফিরব� না? কেনো? ফিরত� ভয� হয�? পাছে আম� আবার� চিঠি লিখে বস�!"........ "আম� আবার� চিঠি লিখবো। তোমা� কা� থেকে কোনো প্রত্যুত্ত� আশ� না করেই!"...... কেনো ঝিনি� ভেজা কন্ঠ� আর্তস্বর বেজে ওঠ� বারবার " আম� তো কিছু কিনত� আসিনি। শুধু নিজেকে হা� কর� বিকোতে এসেছ�"!!............. � পর্যায়ে এস� লেখকের কথ� শুনে রা� হয� বৈকি!!.... গাজি� মত� সুরে গেয়� উঠতে ইচ্ছ� কর� "যে জন প্রেমে� ভা� জানে না / তা� সঙ্গ� কীসে� লেনাদেনা?" .........
" ক্ষ্যাপা না জেনে তু� আপ� খব� যাবি কোথায়? "
এই বইকে আগলে রেখে আম� থেকে যাবো সারাটি জীবন� চো� বন্ধ করলে� দেখত� পাবো এক আলখাল্লা পর� মানু� রাতে� গাঢ় অন্ধকারে গা� গাইত� গাইত� এগিয়ে যায় আঁকাবাঁক� পথ ধর� ধর�! যুগান্তে� ওপার থেকে যেনো সে হেঁট� এসেছ�!! কলস্বর� স্রোতস্বিনী আর রাতে� একফালি চাঁদ তা� স্বাক্ষী! জন্ম মৃত্যু রূ� অরূপ অচেন� অজানার বাঁধ� পেরিয়� কোথা থেকে যেনো এক রহস্যময়ী কন্ঠস্বর ভেসে আস�............" এমনও সাধে� জন� আর পাবে না মন/ বারে বারে আর ফিরে আস� হব� না".......
কেবল পাতা� সংখ্যায় না, সাহিত্যে� বিচারে� � এক বিশা� বড� উপন্যা�, তাতে সন্দেহ নেই। বিট্টু (স্ত্রী - ২০১৮ ) � মত প্রেমভাব থেকে বর্জিত মানুষে� জন্য একবারে� সুপারি� যোগ্� নয়। হিন্দি বা ইংরাজিতে একের পর এক ক্রাইম থ্রিলা�, সাইক� থ্রিলা� কিংব� টেরোরিস্� হান্টি� মূলক সিরি� দেখে দেখে যদ� মন একঘেয়� হয�, তাহল� মন ভালো করার জন্য যথোচিত উপাদান� আর একটা কথ�, পাঠকদে� চাহিদা হো� বা ডা� ব্রাউন গোত্রীয় বিদেশি লেখকের অত� প্রভাব হো�, ইদানিং কালে� সাহিত্যে লেখকদে� মধ্য� নিজে� গবেষণা� মাহাত্ম্� প্রচারের প্রাচুর্যত� � বেশি দেখি� কে� বিজ্ঞানী, কে� ঐতিহাসিক, কে� বা আবার পৌরাণিক। ভাষা� লালিত্�, বর্ণনামূলক চিত্রায়� কিংব� জীবনের ছো� ছো� মুহূর্� উপভো� যে আনন্� এই প্রকারের গল্প পড়ে পাওয়া যায়, সেটা ক্রমশঃ কম� আসছে � লেখকদে� সেদিকে দৃষ্টিপা� কর� উচিত�
"দি� তা� তুলন� কি যা� প্রেমে জগ� সুখী, হেরিলে জুড়ায� আঁখি, সামান্যে কি দেখিতে পারে তারে ? তারে যে দেখেছে সে� মজেছ� ছা� দিয়� সংসারে, হারায়� সে� মানুষে তা� উদ্দেশ� আম� দে� বিদেশে বেড়াই ঘুরে� আম� কোথায় পা� তারে আমার মনের মানু� যে রে..." ~ গগ� হরকর�
কে সে� মনের মানু� যা� খোঁজ� ঘুরে বেড়ান লেখক ? কী সে� রূ� যা� দর্শ� অভিলাষী তিনি ? তিনি কি কোনো দে� বিগ্রহ বা পর� সাধক, মন্দির� বা মসজিদে যাঁর বা� ? বু� ভর্ত� বিষে� ভান্� নিয়� কাকে খুঁজ� ফেরে� কালকূট ?
"... আম� তীর্� অতীর্� জানি না� মন্ত্রতন্ত্র সাধনপূজন সন্যাস-বৈরাগ্�, কিছু আমার নেই। কীসে� সন্ধান� ফিরি তা� জানি না�... আম� যে� এমনি কর� চলতে পারি, এমনি কর� দেখত� পা�, আর পাওন� নিয়� চল� যাই। পথ চলাত� এই আমার পর� পাওয়া যে�...�"
এই; এই পথ চলাই আদতে তাঁর ডেস্টিনেশন� তা� দক্ষিণের বিদ্যেধরী� ঢেউয়ে ভর কর� তাঁর ভেসে পড়া� তা� মলুট� / মল্লহাটি� কালীপুজো থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতনের পৌষমেল�, চন্ডীদা� আর রজকিনী� পদধুলি ধন্য নানু� থেকে সিউড়িতে বাউল গোপীদাসে� আখড়�, বক্রেশ্বরে বাবা� 'থা�' আর মহাশ্মশা� থেকে অট্টহাসে� সতীপী� হয়ে কেন্দুলিতে জয়দেবের মেলা, নবদ্বীপে� ধুলট উৎসব থেকে ফাল্গু� মাসে হাড়োয়ায় পী� গোরাচাঁদের মেলা ঘুরে বেড়ান তিনি� মেলা দেখেন। কত রক� কত মানুষে� সঙ্গ� দেখা হয়ে যায়� তিনি মানু� দেখেন। কত আশ্চর্� সম্পর্কে� পর� লাগে তাঁর গায়ে। স্নে�, প্রীতি, সখ্য, তাঁক� ভরিয়ে তুলত� চায়� তিনি সাড়� না দিয়� পারে� না� অথ� যে কোনো বন্ধনক� তাঁর ভয়। ভয� তাঁর নিজে� মনকেই।
"... মানুষে� প্রাণে� টা� তাকে কোথায় নিয়� যায়� কেবল সম্পর্কে� কথ� মেনেছি� কিন্তু সম্পর্� গড়ে ওঠার কত যে বিচিত্� বিস্ময� রহস্�, সময়ের আশ্চর্� মাপজোক, তা যে� এম� কর� জানা ছি� না�... সে সম্পর্কে� কোনও না� নে�, শুরু নে�, শে� নেই। সে সম্পর্কে� খোঁজ পাবে না এই সমাজের শাস্ত্রে বিধানে� এত� তুমি যে রং-� মাখাতে চা�, রং ধরবে না� এই পরিচয় আছ� অচিন� বিচিত্রে...�"
এই ভেসে পড়া� পথ� দেখা হয়ে যায় মামু� গাজি, অলকা চক্রবর্তী ওরফে ঝিনি, দুলি, মাহাতো চাচা � আঙরি, সুষি, ধন�, অচিনবাবু, গোপীদা� বাউল � তাঁর প্রকৃত� রাধা, গোকু� বাউল � তা� প্রকৃত� বিন্দু, সুজন, কুসু�, কাশীনা�, নিতা�, অবধূ� � তা� প্রকৃত� যোগমতী, মদ� বাউল � তাঁর প্রকৃত� মনোহরা � আর� কত না� না জানা মানুষে� সঙ্গে। চলার পথ� তিনি মানবজমিন আবাদ কর� চলেন, তাতে তাঁর প্রাণে� ভিতর� কলকলিয়ে যায়� তাতে যদ� চোখে� জলের ছিটে থাকে, একটা খুশি� ঝরনা� বাজে� তিনি অবাক হন যত, মুগ্� হন আর� বেশি� চলার পথ� এই তাঁর প্রাপ্তি� কী খুঁজ� ফেরে� তা তিনি জানে� না, শুধু পথ চলাক� তিনি গড� করেন�
"...কেবল মন� হয� আম� এখান� নে�, বর্তমানে নেই। আম� যে� হাজা� বছ� ধর� অনেক পায়ের চিহ্নে চিহ্নে চলেছি। আম� বহ� দূ� থেকে আস� আমার� ছায়ায� ছায়ায়। এক� না, বহ� লক্ষ কোটি� সঙ্গে।"
চলতে চলতে তিনি উপলব্ধ� করেন সব কিছু� চেয়� মানু� বড়। মানুষে� জীবনধর্ম বড়। শুধুমাত্� পুরোহি� আর মোল্লা� মন্ত্রেই মানু� মানুষে� কাছে ধর� পড়ে না� মর� মন্ত্র� জাগে না� প্রাণে� ধিকিধিকি চা�...�
এই প্রাণে� ধিকিধিকি� খোঁজ পাওয়া যায় গাজী, আঙরি, ঝিনি, অচিনবাবু, গোপীদা�, বিন্দু, যোগমতী� প্রীতি� নির্ঝরে। গোপীদা� তাঁক� শেখায় বাউল ফকিরের অমোঘ মন্ত্র � যা নে� ভান্ডে তা নে� ব্রহ্মান্ডে।
।। রূ� স্বরূপ অরূপ দিখাকে হা� হি মে হা� হি খেলে... আপনি মাধী মে আপ মে ডোলু খেলু� সহ� স্�-ইচ্ছ� ।। (কবী�)
মুরশেদ আর গুরু� নামে পথ চলার এম� বিচিত্� ছব� দেখত� দেখত� বারে বারে বুকে� কাছে হা� এন�, কাকে যে নমস্কা� করতে চা� তিনি নিজে� বুঝত� পারে� না� কেবল প্রার্থন� করেন, "আমার মনকে স্পন্দিত রাখত� দা�, আমার চো� খোলা রাখো�"
নিজেকে বিকিয়� হা� করতে আস� তাঁর অচিন অধরা� সন্ধানে। ত্রাণে� খোঁজ� যা� কিনা তা তিনি জানে� না, শুধু এইটুকু জানে� তাঁর সব� বিষে� ভরা। সে� বি� তিনি সইতে পারে� না� অমোঘ সে� কালকূট বি� নিয়েই তাঁর চলা।
এই মহাগ্রন্থে� কোনো পা� প্রতিক্রিয়া বোধহয় হয� না� শুধু পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়, আখরে আখরে এক ধর�-অধরা, বোঝা না বোঝা� খেলা চলতে থাকে� ইচ্ছ� হয� কালকূট সে� বি� কন্ঠ� ধারণ কর� দেখি মুরশেদের নামে� মরণে কেমন সুখ।
এই বই সম্পর্কে কিছু বল� মানে� ধৃষ্টতা। গতরাত্তিরে শে� করেছি। এখনও ঘোরে� মধ্য� রয়েছি� এম� সুন্দর করেও লেখা যায়? বইটিতে লেখক পরিব্রাজ� হয়ে নিজে ঘুরেছেন। আমাকেও ঘুরিয়েছেন� আম� ওনার সাথে� দক্ষিণের বাদা অঞ্চলে� লোনা হাওয়ায় শ্বা� নিয়েছ�, বীরভূমের লালমাটির ধুলো মেখে বাউল শুনেছি, বাউলের সাধনতত্ত্ব জেনেছি� সর্বোপরি দেখেছি মানুষকে। লেখক এই এক উপন্যাসে মানবসত্ত্বার কত না রূ� দেখিয়েছেন� এত ভিন্� রূ�, এত ভিন্� ভাষা, ভিন্� সমাজ, তা সত্ত্বেও একটা মৌলি� জায়গায় সব মানুষই এক� দ্বাপর� যে ব্যথায� বেজেছি� শ্রীরাধিকা, সে� এক� ব্যাথায় গল্প� বেজেছে ঝিনি, দুলি, বিন্দু, যোগোরা� মানবের দুনিয়ায� কেউই ফেলন� নয়। দাগী চো� হো� অথবা মদমাতা� ভৈরব, সক� শ্রেণী� মানুষই তাদে� অন্তরে কোনো না কোনো ঐশ্বর্যে� খন� কেটে রেখেছে� প্রথ� দর্শনে বা সামান্� আলাপনে সে খনির হদিশ পাওয়া যায় না� কিন্তু লেখকের মত� ক্ষমতা থাকল�, সে� ঐশ্বর্যে ধনী হয়ে ঘর� ফেরা যায় অনায়াসেই। তা�, এই বই পড়ল� নিজেকে ক্ষুদ্� লাগে� মন� হয�, মানুষে� জগতে� এহেন পরিচয় নিজে� অভিজ্ঞতায় প্রত্যক্� করতে না পারল�, এই মানবজীবনের মূল্� কোথায়?
এই বইয়ের সবকথ� বুঝত� পেরেছি, এম� বলার সাহস আমার নেই। এত গভী� উপলব্ধ� দিয়� লেখক কাহিনি গড়েছে� যে তা� সম্পূর্ণ মর্মার্থ আমার এই স্বল্প বয়সের অনভিজ্� জীবন দিয়� টে� পাওয়া সম্ভ� নয়। তথাপ�, যতটুকু বুঝেছি, সেটুকু� ঘো� থেকে� এখনও বেরোতে পারি নি�
বইটা পড়ত� পড়ত� কখনো মন� হয়েছে, � তো কবিতা। কবিতার মত� রূপক� সাজানো সুন্দর শব্দবন্ধ দিয়� লেখক লিখে গেছেন। কখনও মন� হয়েছে, রোমান্টি� ক্লাসিক। আবার কখনো মন� হয়েছে নিছক একটা ভ্রমণকাহিনী পড়ছি। একেকটা পর্ব� একেকটা অনভূতি� যতগুলো চরিত্র লেখক গড়েছে�, সবকটাক� ভালো না বেসে থাকা যায় নি� এমনক� তুচ্� রিক্সাওয়ালাকে� প্রেমে� দেশে� মাঝি মন� হয়েছে� সবার মধ্য� ঐশ্বর্য। সব্বাই ধনী� লেখক আর তাঁর সাথে সাথে আম� নিজে� কেবল রিক্ত। সকলে� অন্তরে� ঐশ্বর্� থেকে সংগ্রহ কর� কর� ফিরি�
এই বই সবার পড়া উচিত� বারবার পড়া উচিত� অন্ত� এই একটা বই না পড়ল� জীবন� বড� একটা কিছু মি� হয়ে যায়�
আমরা শহুর�, শিক্ষি� ভাষায় যাদে� প্রান্তি� মানু� বল�, তাদে� বিশ্বা�, আচার, সু�-দুঃখ, গা�, কিংবদন্ত� আর আশ�-নিরাশা� মহাকাব্য বল� চল� এই বইকে� এত� আছ� প্রব� বেগে ধাবমান জীবন� পথের বাঁক� ফেলে আস� মানুষদের নিয়� নানা ভাবনার অনুরণন� আর আছ� “জীবন এত ছোটো কে�?� এই অনুক্ত আক্ষেপ�
� বই না পড়ল� আপনা� কী হব�, জানি না� তব� পড়া� পর আপনি� লালনের শর� নিয়� হয়ত� গেয়� উঠবে�, “এমন মানব জন� আর কি হবে�?� আর হ্যা�, ঝিনি’র মত� এই বইটা� স্মৃতি� আপনা� কাছে থেকে যাবে অসহ্� সুখে� কষ্ট নিয়ে। যে ভাবে ঝিনি চরিত্রটি দেখানো হয়েছে, মনের ভিতর� কোথা� কিছু একটা বেজেছে � বারংবা� ইচ্ছ� হয়েছে যে� তাকে শক্ত হত� দেখি, লেখকের ওপরে নিষ্ফল ক্রো� জন্ম নিয়েছে। নিজেকে কালকূট প্রমাণ করার জন্য এতটা� দরকা� ছি� কি? সামান্� পাঠক আম�, উত্ত� জানা নেই।
আম� শুধু কল্পনা করতে পারি যে কালকূটের যাত্রাপথের শে� হব� ঝিনি নামক নদীতে মিশে..যদ্দিন না শে� হচ্ছ� তদ্দিন চরৈবতি..
পড়ত� পড়ত� খেয়াল হয়ন� কখ� নারা� ঠাকু�, মাহাতো চাচী-চাচা, সুষি, কুসু�, লিলি, ভৈরবী, গোপীদা�, অবধূ�, অধ� মাঝিকে নিয়� তৈরী কর� পৃথিবী� মধ্য� ঢুকে গেছি� � যে� এক অনন্� যাত্রা, যেখানে পথ চলতে চলতে চরিত্রগুলো বদলে যেতে থাকে; কিছু চরিত্র কিছুটা পথ সঙ্গ দেয়, তো কিছু চরিত্র আরেকটু বেশী সময় সাথে থাকে�
অতিথির তারাপদ কিসে� ডাকে যে� বারবার দৌড়� যে�, আংটি চাটুজ্যে� ছোটভাই বসন্তেরও মন বস� না ঘর� - এই বারংবা� বাঁধনহার� হত� চাওয়া� চেষ্টাটা হয়ত জীবনের� একটা অং�, যারা একেবার� পেরে যায় তারা অন্যজগতে� সন্ধান পায়; লেখকের মত� কারো অবস্থা হয� পরশপাথ� সন্ধানকারী মানুষে� মত� - কি যে� তারা খুঁজেই চল�; আর কিছু মানু� যাঁতাকলে পিষত� পিষতেও ভিতর� ভিতর� সদ� পলাত� হয়ে জীবনটা কাটিয়� দেয়� যারা বেরিয়� পড়ত� পারে একবা� তারা� সে� ইন্দ্রজালে� সন্ধান পায় যে মায়ার বশ� সিঁধেল চোরও চুরি ছাড়তে পারে, বছরে অন্ত� একবা� একসাথে কাঁদবা� জন্য কোনও কাঁধ পাওয়া যায়� কিসে� সন্ধান� � যাত্রা ছি�? সত্যের, সুন্দরের, জীবনের - কোনটার? জানিনা আম�..আম� শুধু মানু� দেখলাম একের পর এক..সবাই যে� কোনও এক� জায়গায় শেষমেশ লী� হয়ে গেলেন।
গাজী, অনেক জন্মের বন্ধ� ছিলে যে� তুমি - মামু� গাজীকে হয়ত কোনদিন� ভুলত� পারব না, বা বল� চল� চাইব না� এরকম বন্ধ�, সঙ্গী হয়ত বইয়ের পাতাতে� পাওয়া যায়� দেখা হব� দোস্� কোথা� না কোথা� - চিনে নে� তোমাকে এক দেখাতেই।
পড়ত� পড়ত� লেখকের সাথে সহমর্মিত� বর� কম� বো� করেছ�, যতটা আত্মীয়তা তৈরী হওয়ার তা হয়েছে ঝিনি� সাথেই। মন� হচ্ছিল - লেখা� কোনও একটা চরিত্র হয়ে ঝিনি’ক� বল�, ‘পাশ� আছ�, পাশে থাকব� তুমি যত ইচ্ছ� বি� পা� কর..যেদি� সে আসবে তুমি চল� যে�; ততদি� না হয� তোমা� পাশটুকুত� থাকি - না হয� একটু দূরে� রইলাম।� এতদি� মাধবীলতার মোহাবিষ্� ছিলা�, ঝিনি এস� সে� মোহপাশ থেকে যে� মুক্� করলেন। যে ভাবে ঝিনি চরিত্রটি দেখানো হয়েছে, মনের ভিতর� কোথা� কিছু একটা বেজেছে - বারংবা� ইচ্ছ� হয়েছে যে� তাকে শক্ত হত� দেখি, লেখকের ওপরে নিষ্ফল ক্রো� জন্ম নিয়েছে। নিজেকে কালকূট প্রমাণ করার জন্য এতটা� দরকা� ছি� কি? সামান্� পাঠক আম�, উত্ত� জানা নেই।
আম� শুধু কল্পনা করতে পারি যে যাত্রাপথের শে� হব� ঝিনি নামক নদীতে মিশে..যদ্দিন না শে� হচ্ছ� তদ্দিন চরৈবতি..
পুনশ্চ : আবার� পড়ব, আর� যত্ন সহকারে..
This entire review has been hidden because of spoilers.
সমরে� বস� ( কালকূট ) এর লেখা নিতান্তই আমাক� মুগ্� কর� | বিশে� কর� এই বইটি |
যেটি আমার পড়া অন্য সক� বইয়ের মধ্য� এট� খুবই অন্যরক� বই � এই বইটি� রিভি� দেয়� খু� কঠিন! যা� লিখব� না কেনো কম হয়ে যাবে! একটি বই যেটা আপনাকে অন্য ভিন্� কোনো জগতে নিয়� যেতে পারে , এই বই খু� সুন্দর এব� কথাগুল� এত সুন্দর কর� বর্ণনা কর� যা সত্য� অসাধার� | প্রে� , ভালোবাসা � এক গভী� ফিলসফি তে ভর� এই বইটি !
A book full of philosophy, love, longings and wander thirst. It requires a very qualified person to review the book. It feels audacious to review it. I only can say that I loved the journey and now standing speechless at the end.