যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স টাওয়ারে� স্থপতি ফজলু� রহমা� খা� ষাটে� দশকে দেশে ফিরে আসেন� কথ� ছি�, পাকিস্তা� সরকা� তাকে ইঞ্জিনিয়ারি� বিভাগে একটি চাকর� দেবে� কিন্তু ছয� মা� বস� থাকা সত্ত্বেও ফজলু� রহমা� খানক� পাকিস্তা� সরকা� চাকর� দেয়নি� তিনি তখ� বাধ্� হয়ে যুক্তরাষ্ট্র� চল� যা� এব� বাকি ইতিহাস মোটামুটি আমরা সবাই জানি� কিংবদন্ত� হয়ে ওঠেন স্থাপত্যকলায়। সে� বিখ্যা� স্থপতি ফজলু� রহমা� খানে� পিতা 'আমার জীবন' বইয়ের লেখক আবদু� রহমা� খান। তিনি তা� পুত্রে� চাকর� না পেয়� যুক্তরাষ্ট্র� চল� যাওয়া� ঘটনাকে অল্পকথায� লিখেছেন। অথ� পড়ত� গিয়� তাঁর মনোবেদনা � হতাশ� আম� উপলব্ধ� করতে পেরেছি�
খা� বাহাদু� আবদু� রহমা� খা� এই প্রজন্মে� পরিচিত কে� নন� তিনি ব্রিটি� আমলে শিক্ষা বিভাগে উচ্চপদস্� কর্মকর্ত� ছিলেন। যাকে বল� হত�, এডিপিআ� তথ� ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন। বিলুপ্� এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটি� আমলে জনশিক্ষা বিভা� নামে পরিচিত ছিল। স্কু�-কলেজের অনুমোদ� � পরিদর্শনের মত� গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুল� ছি� ডিপিআইয়ের অধীনে� অবসরের পর আবদু� রহমা� খা� ছিলে� জগন্না� কলেজের অধ্যক্ষ। 'আমার জীবন' তা� স্মৃতিময� কর্মজীবনের বর্ণনায় সীমাবদ্ধ নয� ; সেখানে দেশকালের পাশাপাশি ব্যক্তিগ� জীবন স্থা� পেয়েছে। প্রায় আড়া� � পাতা� বইটি কমপক্ষ� ত্রি� বছরে� বেশি সময় ছাপা হয� না� তা� দীর্ঘকাল এই স্মৃতিকথাখান� নে� বইয়ের বাজারে� এমনক� একসময়� বিভিন্� চমৎকার বইয়ের প্রকাশ� 'চট্টগ্রা� কো-অপারেটিভ বু� সোসাইট� লি�' টিকে আছ� কি না, আল্লাহ মালু�!
ঠি� ষা� বছ� আগ� মারা গেছে� আবদু� রহমা� খান। তা� বুঝতেই পারছেন, তিনি বর্তমানে� তুলনায� বেশি পুরোনো দিনে� মানুষ। তা� তাঁর লেখায় বিগত শতাব্দী� প্রথ� ষা� বছরে� বিভিন্� ঘটনা উঠ� এসেছে। যা আজকে হয়ত� অবাস্ত� মন� হবে। গতকা� ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বনাম সা� কলেজের দ্বন্দ্ব� পূর্� বাংলার প্রথ� কলেজ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদে� দেখা গেছে অগ্রণী ভূমিকায়� অথ� বি� শতকে� গোড়ায� এই ঢাকা কলেজ নিয়েই আবদু� রহমা� খা� লিখেছে�,
' ঢাকা কলেজ� তখ� খু� ভা� ভা� প্রফেস� ছিলে�, চৌদ্� জন ছিলে� আই-�-এস, তন্মধ্যে কেমিষ্টি� প্রফেস� বি এন দা� ছাড়� আর সকলে� ছিলে� ইংরেজ। পড়াশুনা� ব্যবস্থা প্রেসিডেন্সি কলেজের চেয়েও ভা� ছিল। প্রত� সপ্তাহ� একটি পরীক্ষা হইত। উহার উপ� বছরে� শেষে পুরস্কার দেওয়া হইত। পুরস্কার বিতর� কর� হই� Speech dayতে� পুরস্কার লা� সাহেবে� হা� দিয়� দেওয়া হইত। '
বর্ণনা পড়ে মন� হত� পারে আবদু� রহমা� খা� তৎকালী� সময়ের পুরো উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্� শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজকে ছো� করছেন। কারণ হয়ত� তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ� পড়ত� পারেননি। এট� ভু� ভাবন� হবে। আবদু� রহমা� খা� নিজে� প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তা� তা� বয়ানক� ফেলে দেওয়া� সুযো� সীমিত।
আবদু� রহমা� খানে� স্মৃতিকথার ভাষাশৈলী� সাহিত্যমূল্য হয়ত� কম� কিন্তু বাংলার সমাজ � অতীতক� বুঝত� এই স্মৃতিকথার দা� অমূল্য�
১৯০০ সালে� গোড়ায� বৃহত্ত� বরিশাল অঞ্চলে জুম্মা� নামাজকেন্দ্রিক দারু� হার্� বনাম দারু� ইসলা� বিতর্ক জিন্দা ছিল। আবদু� রহমা� খা� তখ� মাদারীপুরে� শিবচরে পড়েন৷ তা� স্কুলে� শিক্ষক ছিলে� হাফে� আবদু� মান্নান। তিনি এই হাফে� সাহেবক� নিয়� লিখেছে�,
' দুঃখের বিষয� শীঘ্রই তাকে শিবচ� ত্যা� করিত� হয�, কেনন�, তিনি জুমা পড়িতেন। বাহাদুরপুরের পী� বাদশাহ মিঞা� পিতা খা� বাহাদু� সঈদউদ্দী� সাহে� জুমা� বিরোধী ছিলেন। ইংরে� সরকারে তাঁহার বিশে� প্রতিপত্তি ছিল। তিনি হাফি� সাহেবক� সরাইয়� তাহা� স্থানে মৌলবী আদিলুদ্দী� সাহেবক� আনাইলেন। '
মাদারীপুরে� বাঙালি মুসলমানদের অবস্থা নিয়� আবদু� রহমা� খানে� স্মৃতিচারণ,
বাঙালি মুসলমানে� এই দীনহী� অবস্থা বোধকরি পুরো বঙ্গেই ছিল। এককভাব� তা মাদারীপুরে� ক্ষেত্রে খাটে না�
অবিভক্� বাংলার রাজনীতি এই বইয়ের একটা বড� অং� জুড়� আছে। সে� রাজনীতি� এক ঐতিহাসিক চরিত্র শেরেবাংল� � কে ফজলু� হক� আবদু� রহমা� খা� ব্যক্তিগতভাব� হক সাহেবক� ছোটোবেলা থেকে� চিনতেন� পরবর্তীতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী � প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তা� সঙ্গ� ঘনিষ্ঠভাবে কা� করেছেন� তিনি এক জায়গায় হক সাহেবক� নিয়� লিখেছে�,
'ফজলু� হক সাহে� ছিলে� বরিশালের প্রসিদ্ধ উকিল মুহম্ম� ওয়াজি� বিএল সাহেবে� পুত্র। তিনি জিলা স্কু� হইতে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কমপি� করেন, পর� প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে অনুরূপ কৃতিত্বে� সহিত এফ-� পরীক্ষায় উত্তীর্� হন, অতঃপ� গণিত, পদার্থবিদ্যা � রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স সহ বি, �, এব� গণিত� এম, � পা� করেন � তিনি যদিও বিজ্ঞা� বিভাগে� ছাত্� ছিলে� ইংরেজী ভাষা� উপ� তাঁহার অসাধার� দখ� ছিল। তিনি এম� অনায়াসে ইংরেজী বলিতেন যে, উহ� যে� তাঁহার মাতৃভাষা � তিনি কিছুকা� আর সি কলেজের অঙ্কের অধ্যাপ� ছিলেন। পর� বি-এল পা� করিয়া, কলিকাত� হাইকোর্ট� ওকালতী আরম্� করেন � তিনি সেখানে স্বনাম ধন্য স্যা� আশুতোষ মূখার্জি� নিকট শিক্ষা নবী� ছিলেন। পিতা� মৃত্যু� পর তিনি বরিশাল� আসিয়া ওকালতী করেন� তিনি অত্যন্� মেধাবী ছিলে�; কিন্তু বাল্যকাল হইতে� তাঁহার মধ্য� শৃঙ্খলার অভাব ছিল। আমরা শুনিতা�, তিনি রাত্রিতে কখ� পড়িবে�, কখ� খাইবেন এব� কখ� ঘুমাইবেন তাহা� কো� নিশ্চয়ত� ছি� না � তিনি অনেক সময় ভাবিয়� চিন্তিয়� কথ� বলিতেন না� এই হেতু কখ� কখ� বারে� হিন্দু উকিলের� তাঁহার ব্যবহারে অসন্তুষ্� হইতেন। পৌঢ় হেমায়েত উদ্দী� সাহে� মধ্য� পড়িয়� তাহা মিটমাট করিয়া দিতেন। তাঁহার স্মর� শক্ত� ছি� অত্যধিক। তিনি যখ� কলিকাতায� পড়িতে� এক সময়� বৈঠক খানা রোডে� নিকটবর্তী কোথায়� বাড়ী ভাড়� করিয়া ছিলেন। '
বইয়ের অন্য একটি স্থানে হক সাহেবে� স্বজনপ্রীতি নিয়� আবদু� রহমা� খানে� বয়া�,
'ফজলু� হক সাহে� উদার প্রকৃতির লো� ছিলে� কিন্তু অনেক সময় স্বজ�-প্রীতি হেতু নিজে� বিবেকানুযায়ী কা� করিত� সক্ষ� হইতে� না � দৃষ্টান্� স্বরূপ একটি ঘটনা� উল্লেখ কর� � খা� বাহাদু� আবদু� মুমি� সাহে� ছিলে� ফজলু� হক সাহেবে� বাল্� বন্ধ� � তাঁহার নিকট আমার যাতায়াত ছি� � তিনি আমার এক শালী� সহিত তাঁহার জ্যেষ্� পুত্� আবদু� রশীদে� বিবা� দিয়াছিলেন � মন্ত্রী সভ� গঠনে� প্রাক্কালে ফজলু� হক সাহে� মুমি� সাহেবক� আমার সম্মুখ� বলিলেন, “দেখ, যেখানে মুমি� না�, সেখানে হক� না� ।� তিনি কথ� দিয়াছিলেন তাঁহাক� মন্ত্রসিভায় গ্রহ� করিবেন� কিন্তু মন্ত্রীসভ� গঠ� করিবার পর তিনি একদি� মুমি� সাহেবক� বলিলেন, “দেখ, আমার তোমাকে লইবা� খুবই ইচ্ছ� ছি� কিন্তু অমুক� যে তোমাকে চায় না।� এই অমুক ছিলে� তাঁহার এক ভাগিনেয়� '
বঙ্গভঙ্গ বাঙালি মুসলমানে� জাগরণে কত বড়ো সুযো� সৃষ্টি করেছিল তা আজ শতবর্ষ পেরিয়� এস� কল্পনা কর� যায় না� বাঙালি মুসলমানে� চোখে বঙ্গভঙ্গ কেমন ছি� তা� একজন সাক্ষী আবদু� রহমা� খান। এই সাক্ষ্� অত্যন্� গুরুত্বপূর্ণ�
আপাদমস্ত� অসাম্প্রদায়িক মানু� আবদু� রহমা� খান। তিনি দেখেছে�, কীভাবে ব্রিটিশর� দাঙ্গা বাঁধিয়ে পুলিশক� নিষ্ক্রিয় রাখত� কা� এই দাঙ্গা� ফা��়দ� লুটত তা নিয়েও তা� ছোটো পর্যবেক্ষণ আছে।
আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়� বাংলাদেশ� আলোচনা নেই। আবদু� রহমা� খা� স্যা� আশুতোষের গুণমুগ্ধ ছিলেন। তা� একাধিকবা� আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্� এসেছে। স্মৃতিচারণ করেছেন আশুবাবুর ছেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও�
গে� শতাব্দী� ঔপনিবেশি� শিক্ষাব্যবস্থাকে বুঝত� বইটা দরকারি� কারণ লেখক স্বয়ং শিক্ষা বিভাগে� সঙ্গ� নিবিড়ভাবে জড়ি� ছিলেন।
আবদু� রহমা� খানে� লেখায় অসংখ্যবা� পরিবার-পরিজনে� কথ� এসেছে। তিনি পারিবারি� মানু� ছিলেন। তবুও এত আত্মীয়স্বজনে� বর্ণনা পড়ত� একঘেয়� লেগেছে� এট� বইয়ের একটা বড়ো দুর্বলতা� কিছুক্ষেত্রে ধারাবাহিকত� নষ্ট হয়ে গিয়েছিল� তা-� বইটি� একটা খামতি৷
সবকিছু মিলে, বাংলার সামাজি� � রাজনৈতিক ইতিহাসের ছব� হিসেবে বইটা মন্দ না� গদ্য মোটামুটি ঠি� আছে। সব ধরনে� পাঠকের জন্য নয� বইটা� মূলত, যারা বাংলার সামাজি� � রাজনৈতিক জীবন নিয়� আগ্রহী, তাদে� জন্য� লেখা আবদু� রহমা� খানে� 'আমার জীবন'� এই বইটি অবশ্যই রিপ্রিন্� হওয়� উচিত�