দীনে� চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ মানুষে� কাছে সুপরিচিত নন� তিনি আইনজীবী ছিলে�, সা�-জজ হিসেবে অবসর� যাওয়া� পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়� আই� বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন� আই� বিষয়ে বাংলায� বে� ভালো কিছু বই লিখেছেন। তা� আইনে� জগতে� মানুষে� কাছে পরিচিত না� দীনে� চন্দ্র দেবনাথ� 'কত কথ� কত স্মৃতি' তা� আত্মজীবনী� প্রায় চা� � পাতা� বইটি� প্রকাশ� তিনি নিজে� তব� পরিবেশ� জাতীয় সাহিত্� প্রকাশ� কিশোরগঞ্জে� হাওর অঞ্চলে জন্ম লেখকের� এরপর চাকরির টানে বাংলাদেশের বিভিন্� স্থানে ছিলেন। তা নিয়� বইতে লিখেছেন। বর্ণনা করেছেন একাত্ত� সালে জা� বাঁচাত� মুসলিম হয়ে যাওয়া� দুঃস� ঘটনা�
কিশোরগঞ্জে� একটি মোটামুটি স্বচ্ছ� পরিবারের সন্তান দীনে� চন্দ্র দেবনাথ� তা� পিতা� জমিজমাসহ মহাজনী ব্যবসায় ছিল। প্রায় এক � বছ� আগ� কিশোরগঞ্জে� হাওর অঞ্চলে� নিখুঁত বর্ণনা পড়ত� খু� ভালো লাগছিল� সে� সময়ের বিচিত্� পেশাগুলো� একটি হিরালী� যা আজ লুপ্ত। লেখক এই অভিন� পেশা নিয়� লিখেছে�,
'হাওর এলাকার বোরো ধানে� মাঠগুল� শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষার দায়িত্ব� থাকতেন “হিরালীরা”। এই “হিরালী� কথাট� বাংলাদেশের ভাষা� আঞ্চলি� অভিধান� আছে। শিলাবৃষ্টি থেকে পাকা বোরো ধা� রক্ষার রাখালি-তে একজন হিরালী� আওতাধী� কয়েকট� বোরো ধানে� মা� থাকতো। প্রত্যেকটি হিরালী তা� আওতাধী� বোরো ধানে� মাঠগুল� কা� বৈশাখী� দিনে শিঙ্গা ফুঁকিয়ে এব� নানা মন্ত্র পড়ে আকাশের শি� তাড়িয়ে মাঠে� পাকা বোরো ধা� রক্ষ� করতে।। এইভাবে সমস্� হাওর এলাকাট� বিভিন্� হিরালী� আওতাধী� থাকতো। আম� ছো� বেলায় দেখেছি আমাদের স্বজাত� একজন হিরালী বৈশা� মাসে আমাদের বাড়ী এস� একমা� থাকতেন� তাঁর আওতায় কয়েকট� বোরো ধানে� মা� ছিল। বৈশা� মাসে দিনে সা� করলে তিনি শিঙ্গা নিয়� বোরো ধানে� মাঠে চল� যেতেন। সেখানে গিয়� শিঙ্গা ফুঁকতে�, নানা প্রক্রিয়ায় মন্ত্র পড়তেন, হা� তুলে মে� তাড়াতেন� শিলা বৃষ্টি আরম্� হলেও তিনি মা� ছেড়� আসতে� না� হিরালী� আওতাধী� মাঠে� যে শি� পড়ত� না তা-নয�, তব� তখ� হিরালী বলতে� তিনি মাঠে ছিলে� তা� রক্ষ�, তা না হল� মাঠে� সব ফস� একেবার� নষ্ট হয়ে যেতো� '
তৎকালী� শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে দীনে� চন্দ্র দেবনাথ একটা ধারণ� দিয়েছেন� পড়েছে� আনন্দমোহ� কলেজ� � ত্রিশে� দশকে স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্ত� হয়েছিলেন। বিভাগে পড়াশোনা� ভীষণ চাপ৷ প্রথ� বর্ষ� শিক্ষার্থী আঠার� জন এব� শিক্ষক আটজন� রীতিমত� এলাহ� কারবার! ইংরেজি সাহিত্যে পড়া� চা� সইতে না পেরে আনন্দমোহ� কলেজ� ফিরে আসেন� সেখা� থেকে� বি� পা� করেন� এরপর আবার ঢাবি� আই� বিভাগে মাস্টার্সে ভর্ত� হন� তখ� নামমাত্র ছাত্� থাকা� সুযো� ছি� এভাব� ভর্ত� হয়ে� আইনে পরীক্ষা দিয়� সে� আমলে ফার্স্� ক্লা� সেকেন্� হন দেবনাথবাবু� আর, প্রথ� হয়েছিলে� বাংলাদেশের সাবে� রাষ্ট্রপতি � বিচারপতি আহসানউদ্দি� চৌধুরী�
আইনে পা� করার পর তা� বিয়� হয� পারিবারিকভাবেই� কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে টাইফয়েড� তা� প্রথ� স্ত্রী মারা যান। এই বইয়ের দুইট� বেদনাময় স্মৃতি� একটি লেখকের প্রথ� স্ত্রী� মৃত্যু� ভীষণ মন খারা� কর� সে� বর্ণনা�
আইনজীবীদে� কত চতুর হত� হয� তা নিয়� নিজে� অভিজ্ঞতা লিখেছে� দেবনাথবাবু� সাধারণ মানু� হিসেবে এস� চাতুর্যে� কাহিনি পড়ে ভালো লাগব� না� পেশাটি সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক ধারণ� তৈরি হওয়� অস্বাভাবিক নয়।
দেশভাগের পর মুনসেফ, বর্তমানে সহকারী জজ হিসেবে যো� দেন। এরপর রংপু�, পঞ্চগড� ( তখ� পচাগড় বল� হত�, সে� পঞ্চগড়ে� অসামান্য বর্ণনা রয়েছে), বরিশাল, রাজবাড়ী � নীলফামারীতে চাকর� করেছেন� আদাল� নিয়� কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন�
মুক্তিযুদ্ধে� সময় রংপুরে দায়িত্বরত ছিলে� দীনে� চন্দ্র দেবনাথ� পরিবারকে নিরাপদ� পাঠিয়� দিতে পেরেছিলেন। তব� নিজে কর্মস্থল রংপুরে� থেকে যান। একেবার� পাকিস্তানি হানাদারদের চোখে� সামনে। লেখক কে� প্রা� বাঁচাত� ভারত� চল� যানন� তা� ব্যাখা দেনন� কিংব� তা স্পষ্ট নয়৷
হিন্দুদে� ওপ� পাকিস্তানি হানাদারদের ক্ষো� সবচেয়� বেশি ছিল। তারা রংপুরে তালিকা কর� হিন্দু নিধন� নামে এব� সে� তালিকায় এক নম্ব� নামট� ছি� হিন্দু সা�-জজ দীনে� চন্দ্র দেবনাথের� কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচ� যা� এব� তালিকা� বাকি হিন্দুদে� খু� কর� পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী� একপর্যায়ে বাধ্� হয়ে মুসলমা� হয়ে যা� দীনে� চন্দ্র দেবনাথ� যদিও তিনি লিখেছে�, অনেক মুসলিম চাইছিলেন না তিনি মুসলিম হন� কারণ ইসলা� এভাব� জবরদস্তি কায়েম কর� ধর্মগ্রহণক� সমর্থন কর� না� তবুও একটা পক্ষ সা�-জজের মুসলিম হয়ে যাওয়াকে 'সুনজরে' দেখে� পুরো বইয়ের এট� সবচেয়� বড়ো বিষাদময় ঘটনা� একজন মানুষক� তা� প্রাণে� দায়� নি� ধর্ম বদ� করতে হচ্ছে। কারণ তিনি সংখ্যালঘু। এর চাইত� জঘন্� আর কী হত�?
বিচারক হিসেবে অবসরের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আই� বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন� সে� শিক্ষকতা জীবনের দীর্� বর্ণনা রয়েছে� রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরী� নোংর� রাজনীতি� ইঙ্গিত�
এট� কোনো অসাধার� আত্মজীবনী নয়। তব� অত্যন্� ঝরঝর� লেখা� একটানা পড়ে যায়� লেখক রাজনীতিকে প্রায় এড়িয়েই গেছেন৷ কে� তা তিনি ভালো জানেন। পড়ত� চাইল� পড়ত� পারেন।
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতে� প্রথ� নারী বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ তা� মেয়ে।