এই কাহিনি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে� জুম্মদের� পাশে� মিজোদেরও� জুম্� � মিজোদে� প্রধান দু� রাজনৈতিক চরিত্র মানবেন্দ্র নারায়� লারম� � লালডেঙ্গাক� ঘিরে বইয়ের বিস্তার। দুজনেই � অঞ্চলে� মূলধারার ইতিহাসের বাইর� থাকা রাজনীতিবিদ। তাঁদের জীবনসংগ্রা� এব� জুম্� � মিজো এথনো পলিটিক্সের অনালোচিত নানা অধ্যায� উন্মোচিত হয়েছে � বইয়ে।
"..আম� একজন চাকম� � আমার বা�, দাদা, চৌদ্� পুরুষ—কেউ বল� না� আম� বাঙালি �
আমার সদস্�-সদস্যা ভা�-বোনদের কাছে আমার আবেদ�, আম� জানি না, আজ আমাদের এই সংবিধানে আমাদেরকে কে� বাঙালি বল� পরিচিত করতে চায় ...� "
গণপরিষদে এম এন লারমার দেওয়া� এই বক্তব্যে� নিহি� রয়েছে সমস্যা � তা� সমাধান� পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্� নৃ-গোষ্ঠী� জনগণ নিজেদেরক� জুম্মা অর্থাৎ পাহাড়� যাঁর� জু� চা� করেন, সে� জাতিগোষ্ঠী হিসেবে দাবি করেন� পার্বত্য চট্টগ্রামে� তি� জেলায় সবমিলিয়� তেরোটি ক্ষুদ্� নৃ-গোষ্ঠী বা� করেন� যাদেরক� মানবেন্দ্রনা� লারম�, যিনি এম এন লারম� নামে পরিচিত, তিনি একত্রে জুম্মা হিসেবে উল্লেখ করেন এব� তাদে� স্বায়ত্তশাসনে� দাবিতে জনসংহত� সমিত� (জেএসএস) গঠ� করেন� এই দলের� সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী�
পার্বত্য চট্টগ্রামে� এই সংকটের ইতিবৃত্ত দীর্ঘকালের� তব� সমসাময়িককাল� তা সূচন� হয� দেশভাগের সময়� ১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রা� পাকিস্তানে� ভাগে পড়ে� কিন্তু সেখানে পাকিস্তানে� নিশা� ওড়েনি� কোথা� ভারত আবার কোথা� ওড়ানো হয়েছি� মিয়ানমারে� পতাকা।
দেশভাগের সময় তৈরি হওয়� সংকটকে তীব্� কর� তোলে আইয়ুব খানে� আমলে যুক্তরাষ্ট্রের পয়সায� নির্মি� কাপ্তা� জলবিদ্যু� প্রকল্প। হাজা� হাজা� এক� জম� রাতারাতি কাপ্তা� হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়� ঠি� কত হাজা� পাহাড়� জনগোষ্ঠী এই হ্রদের কারণ� বাস্তুচ্যু� হন তা নিয়� বিতর্ক কোনোদি� থামেনি� তাদে� ভূমি কেড়� নিয়� বিদ্যুৎকেন্দ্র কর� হল� অথ� তারা পেলো না কিছুই। হ্রদ� বাড়িঘ� ডুবে যাওয়া� পর অনেক চাকম� পরিবার ভারত� চল� যায়�
মুক্তিযুদ্ধে� পর সুযো� ছি� পাহাড়�-বাঙালি সম্মিলিত জাতি গঠনের। পারস্পরি� মতপার্থক্যগুলোকে রাজনীতি� শিষ্টাচা� মেনে মীমাংসার� কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি� বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধী� সরকা� সে� সাফল্য অর্জ� করতে ব্যর্থ হয়। বর� সবাইকে কলমে� জোরে বাঙালি বানিয়� ফেলা� কোশি� নিয়� খো� এম এন লারমাই গণপরিষদে সর� ছিলেন।
আজকে বাহাত্তরের সংবিধানক� দিনরাত গালাগা� কর� রীতিতে পরিণ� হয়েছে� এই সতর্কবার্ত� পঞ্চাশ বছ� আগ� গণপরিষদে এম এন লারম� দিয়েছিলেন� তিনি সংবিধানপ্রণেতাদে� শাসনতন্ত্র সভায� স্মর� করিয়ে দে�,
" যেহেতু এই বাংলাদেশের সাড়� সা� কোটি নর-নারী� মধ্য� ধনী রয়েছে গরিব, রয়েছে মধ্যবিত্� শ্রেণি, তাদে� মনের কথ�, তাদে� খেয়�-পর� বেঁচ� থাকা� কথ� যদ� আমাদের এই সংবিধানে না থাকে, তাহল� কীভাবে আমরা আমাদের যারা ভবিষ্য� বংশধ� আসবে, তাদে� কাছে—এ� দাবি রাখত� পারব, তোমাদে� জন্য আমরা এই সর্বাঙ্গ সুন্দর সংবিধা� রেখে যাচ্ছি � [...] এই সংবিধানে যদ� এম� একটা নীতি না থাকে, যে নীতি� দ্বারা আমাদের দেশে যারা ঘুষখোর, যারা দুর্নীতিপরায়ণ, তাদে� যদ� আমরা উচ্ছেদ করতে না পারি, তাহল� এই সংবিধানে� কো� অর্থ হয� না � [...] আজকে এই সংবিধানে� মাধ্যম� আমরা যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠ� করতে যাচ্ছি সে� সমাজতন্ত্রের নামে আমরা আবার যদ� উচ্চশ্রেণি� দুর্নীতিবা�, ঘুষখোর � সে� ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদেরই আবার দেখত� পা� তাহল� ভবিষ্যতে� নাগরিক, যারা আমাদের ভবিষ্যতে� বংশধ�, তারা আমাদের বলবে, যারা এই সংবিধা� প্রণয়� কর� গিয়েছেন তারা ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে জনগণের সঙ্গ� বিশ্বাসঘাতকত� করেছেন এব� দুর্নীতি� পথ উন্মুক্ত কর� দিয়েছেন� "
বাহাত্তর সালে একদিকে এম এন লারমাস� বাকিরা সাংবিধানিক উপায়ে নিজেদে� স্বায়ত্তশাসনে� পথ� অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ; অন্যদিকে, পাহাড়� নিজেদে� অবস্থানক� দৃঢ় করতে জনসংহত� সমিত� প্রতিষ্ঠ� করেন� বঙ্গবন্ধুর আমলে� আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী� সঙ্গ� একাধিক ছোটোখাটো সংঘর্ষ হয� জেএসএসের সামরিক শাখা শান্তিবাহিনীর। �. কামা� জানিয়েছেন, শে� মুজি� কিছু কিছু পদক্ষে� নিয়েছিলেন� সাংবিধানিক পথকে কখনো� পরিত্যাগের পক্ষ� ছিলে� না এম এন লারমা। তা�, নি� জাতি� পক্ষ� কথ� বলার সুযো� রাখতেই যো� দে� বাকশালে। তব� বঙ্গবন্ধুক� সপরিবারে হত্যার পর পরিস্থিত� বদলে যায়� আত্মগোপন� চল� যা� এম এন লারমা। আর, পাহাড়� রাজনীতি� নতুন অধ্যায়ে� সূচন� হয়।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পূর্� পর্যন্� জেএসএসকে প্রত্যক্� বড়ো কোনো সমর্থন দেয়নি ভারত� বর� কিছু ক্ষেত্রে এদেরকে মোকাবিলায় সহায়ত� করেছিল� কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু� পর পরিবর্তি� পরিস্থিতিত� ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয় সবকিছু� পায় জেএসএস� শান্তিবাহিনীকে ভারত সরকা� অস্ত্র � প্রশিক্ষ� দিয়� বাংলাদেশ� পাঠায়� পুলি� � সেনাবাহিনী� সঙ্গ� শান্তিবাহিনী� সংঘাতে পাহাড় হয়ে ওঠ� অশান্ত�
এদিক� মুজি�-পরবর্তী বাংলাদেশ সরকা� পুরোনো এক অধ্যায়ক� আবার উন্মোচিত করে। এই অধ্যায়ে� নেতা মিজো জাতি� পিতা লালডেঙ্গা।
মিজোদে� রাজ্� জো� কর� দখ� কর� ইংরেজরা। সে� থেকে পরাধীনতার শুরু� এরপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় মিজোরা খুশি মন� ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিল� কারণ তারা মিজোদে� আজাদির খোয়াব দেখায়� কিন্তু সে� ওয়াদা পূরণ না করেই ইংরেজর� চল� যায়� আজাদির স্বপ্নভঙ্গের সাথে যুক্� হয� ভারতের কেন্দ্রীয় সরকা� � আসাম রাজ্� সরকারে� বৈষম্যমূলক আচরণ� উল্লেখ্য, তখ� মিজোরা� আসামের অন্তর্ভুক্� ছিল। মিজোদে� মাঝে ইংরেজর� দুইট� বৈশিষ্ট্� সৃষ্টি করে। এক. তাদেরক� গণহারে খ্রিষ্টে� খোঁয়াড় তথ� খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষি� কর� এব� দু�. সাহসী মিজোদে� সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযো� দেয়� আর, সেনাবাহিনীতে যেসব মিজো চাকর� কর�, তারা নি� সমাজ� অত্যন্� কদ� পেত। এমনই এক মিজো ছিলে� লালডেঙ্গা। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী� সদস্� ছিলেন। নি� সম্প্রদায়ের পক্ষ নেওয়ায় তাকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার কর� হয়। এরপর জীবিকা� তাগিদে জেলাপ্রশাসনে ছোটো একখা� চাকর� নেন। মিজোদে� পক্ষ� � কংগ্রে� সরকারে� বিপক্ষ� প্রচারণা� দায়� তাকে এই চাকর� থেকে� বে� কর� দেওয়া হয়। বৈশিষ্ট্যগতভাব� সাহসী লালডেঙ্গাক� সেনাবাহিনী� চাকর� দিয়েছিল সামরিক অভিজ্ঞতা এব� জেলাপ্রশাসনে চাকরির সুবাদে পেয়েছিলেন শহুর� সংস্কৃতি � বেসামরিক জনগণের মনোভাব বোঝা� সুযোগ। এই দু� মিলে� লালডেঙ্গাস� বাইশ মিজো মিলে গঠ� করেন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ( এমএনএফ)�
লালডেঙ্গার সংগ্রা� � এম এন লারমার স্বায়ত্তশাসনে� আন্দোল� - দুটো� সূচন� ষাটে� দশকে� আর, ভারত সমর্থন দি� চাকমাদের� অপরদিক�, লালডেঙ্গার এমএনএফকে পার্বত্য চট্টগ্রা� ঘাঁট� গড়া� সুযো� দেয় তৎকালী� পাকিস্তা� সরকার। শুধু সুযোগই নয�, অস্ত্রশস্ত্রসহ আন্তর্জাতি� যোগাযোগে� ব্যবস্থা কর� দেয় পাকিস্তান।
একাত্তরে� পর পার্বত্য চট্টগ্রামে� মাটি থেকে উৎখা� কর� হয� এমএনএফকে� তারা বার্মায় আশ্রয়� কে� কে� চল� যায় মিজোরামে� পঁচাত্তরের পর আবার� বাংলাদেশ� আশ্রয় পায় এমএনএফ�
জেএসএস� এম এন লারম� � তা� ছোটো ভা� জে এম লারম� ওরফে সন্ত� লারমার সঙ্গ� প্রীতিকুমা� চাকমাস� বাকি অংশে� বিরো� ছিল। এই মতভেদে� মূ� কারণ বাদি বনাম লাম্বা নীতি� অর্থাৎ প্রীতিকুমা� গ্রু� চাইত ভারতের সাহায্� নিয়� শান্তিবাহিনী� কার্যক্র� চালাতে� তাতে স্বায়ত্তশাস� অর্জনে সহ� হবে। তা� ভারতনির্ভর এই নীতিকে বাদি বল� হয়। অপরদিক�, এম এন লারম� চাইতেন না ভারতসহ বিদেশিদে� সাহায্� নিতে� কারণ তা� আশঙ্কা ছি� ভারত তাহল� নিজেদে� স্বার্থে জেএসএসকে ব্যবহা� করতে পারে� অপরে� সাহায্� না নেওয়া� এই নীতিতে বল� হয�, লাম্বা�
জেএসএসের এই কোন্দল� প্রীতিকুমা� অংশে� হাতে আত্মগোপন� থাকা অসুস্থ এম এন লারম� নিহত হয়। দলটি� দলিলপত্র� এটিক� 'প্রথ� গৃহযুদ্ধ' হিসেবে উল্লেখ কর� হয়েছে�
এরশাদে� আমলে প্রথ� বড়ো আকার� আলোচনা শুরু হয� জেএসএসের সঙ্গে। এক� সময়� লালডেঙ্গার মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট দুর্বল হয়ে ভারত সরকারে� সঙ্গ� আলোচনায় বসে। মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসে।
শান্তিচুক্তি� পর অনৈক্য সৃষ্টি হয� জেএসএসের মধ্যে। দলটি ভেঙে তৈরি হয� ইউপিডিএফ� তারা শান্তিচুক্তি� পক্ষ� না� জেএসএস � ইউপিডিএফ দু� পক্ষের সংঘর্ষ� অনেকবা� রক্তাক্ত হয়েছে পাহাড়� এখনো তা থামেনি� আর� পর� ইউপিডিএফ� ভাঙন ধর� তৈরি হয� নতুন গোষ্ঠী�
অপরদিক�, লালডেঙ্গ� অল্প সময় মিজোরামে� ক্ষমতায় ছিলেন। সফলতার পরিচয় দিতে পারেননি। তব� জলদি� মারা যা� এব� আর� ইমেজ নষ্ট হওয়ার আগেই অমরত্ব লা� করেন মিজোদে� হৃদয়ে� কিন্তু মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট লালডেঙ্গার জীবদ্দশাতে� ভেঙে যায় এব� আলাদ� উপদল� ভা� হয়ে কংগ্রেসে যো� দেয়�
আলতা� পারভেজ সব সময় পড়াশোনা কর� লেখেন। "বাতিঘর" প্রকাশিত বইটিতে তা� মেহনতে� ছা� রয়েছে� কিন্তু বরাবরে� মত� পুরোনো সমস্যা তাঁর রয়ে� গেছে� তিনি সহজভাব� লিখত� পারে� না� সর� বাক্যে লেখা� বদলে তিনি জটিল � যৌগি� বাক্যে লেখেন। ফল� পাঠক হিসেবে শতভা� স্বস্ত� নিয়� তা� লেখা পড়ত� পারিনি� লারমাক� নিয়� বেশি লিখেছেন। লালডেঙ্গ� সে� তুলনায� কম জায়গা পেয়েছেন� ভাষাশৈলী নিয়� আলতা� পারভেজের কা� করার যথেষ্ট সুযো� আছে। আর, এখানেই তিনি দেশে� জনপ্রিয় লেখক মহিউদ্দি� আহমদের তুলনায� পিছিয়ে। জনাব মহিউদ্দি� এক বছরে অনেকগুলো বই 'লেখে�'� সেগুলো� মা� খুবই খারাপ। কিন্তু গদ্য ভালো� তরতরিয়ে পড়া যায়�
আলতা� পারভেজ একেবার� নিরপেক্ষ জায়গা থেকে লেখেননি। তাঁর দর� পাহাড়� জনগোষ্ঠী � মিজোদে� প্রতি। বইটা� বড়ো একটা অং� তিনি নিয়েছেন সুবী� ভৌমিকে� ''Insurgent Crossfire" বইটা থেকে� সুবী� ভৌমিকে� বইটা পড়া� আগ্র� তৈরি হয়েছে�
সবমিলিয়� ভালো বই� তব� আলতা� পারভেজ আর� বড়ো পরিসরে আলাপ করতে পারতেন� নাগাল্যান্ডে� নেতা ফিজোকে এই আলোচনায় আনতে পারল� ভালো� হতো। শ্রীলঙ্কার তামিলদের নিয়� বৃহৎ আঙ্গিক� তিনি লিখেছেন। সেভে� সিস্টার্� নিয়েও এম� সুবিস্তৃ� লেখা� দাবি রইল।