What do you think?
Rate this book
168 pages, Paperback
First published December 1, 1939
"জ্যোৎস্ন� আর� ফুটিয়াছ�, নক্ষত্রদ� জ্যোৎস্নালোক� প্রায় অদৃশ্য, চারিধারে চাহিয়� মন� হয� � সে পৃথিবী নয� এতদি� যাহাকে জানিতা�, � স্বপ্নভূমি, এই দিগন্তব্যাপী জ্যোৎস্নায� অপার্থিব জীবেরা এখান� নামে গভী� রাত্রে, তারা তপস্যা� বস্ত�, কল্পনা � স্বপ্নের বস্ত�, বনের ফু� যারা ভালোবাসে না, সুন্দরকে চেনে না, দিগ্বলয়রেখা যাদে� কখনো হাতছান� দিয়� ডাকে না�, তাদে� কাছে এই পৃথিবী ধর� দেয় না কোনো কালেই৷"
"একটা কণ্টকময় গাছে বেগুনী রঙের ঝাড় ঝাড় ফু� ফুটিয়াছ�, বিলাতী কর্ণফ্লাওয়া� ফুলে� মত দেখিতে� একটা ফুলে� বিশে� কোনো শোভা নাই। অজস্� ফু� একত্� দলবদ্ধ হইয়� অনেকখানি জায়গা জুড়িয়া দেখাইতেছ� ঠি� বেগুনী রঙের একখানি শাড়ী� মত� বাতাবী লেবু� ফু� নয�, ঘেঁটুফুল নয�, আম্রমুকু� নয�, কামিনীফু� নয�, রক্তপলাশ বা শিমু� নয�, কি একটা নামগোত্রহী� রূপহী� নগন্� জংলী কাঁট� গাছে� ফুল। আমার কাছে তাহা� কাননভর� বনভর� বসন্তে� কুসুমরাজির প্রতী� হইয়� দেখা দিল। "মাঝে মাঝে মন� হয� আমার মত� ঘর� পড়ে থেকে অদ্ভুত মায়াময় দৃশ্যে� জন্য হাহাকা� কর� মানুষদের জন্য� বিভূতিবাবু এসেছিলেন�
কদিন আগ� বিভূতিবাবু� পড়ে হ্যাংর� অবস্থায় রিভি� দেওয়া� মত� ভু� এবার আর করছি না! :')
তব� একখানা জীবনশিক্ষা এই ঘটনা থেকে আম� পেয়েছি। লকডাউন� ঘরবন্দী হয়ে বিভূতিবাবু� লেখা পড়া� সুদি�-মূলধনদিক দুইটাই আছ�! পড়ত� নিলে আত্ম� যেভাবে বন-জঙ্গলে ঘুরে-বেড়িয়ে আস�, ঠি� তেমন� ভাবে অপার� শরীরটার মাঝে বিদ্রো� শুরু হয়ে যায়� শেষত� দুয়� মিলেমিশে হতাশ�-আক্ষেপ আর বিরক্ত� মিলে তৎক্ষণাৎ অনুভূতির যে প্রলয়ঙ্কারী স্রো� তৈরী হয�, সে স্রোতে গা ভাসিয়� রিভি� লিখত� যাওয়াটা মোটে� উচিৎ নয়। আমার জন্য অন্ত�! যা� হোক।
দ্যা অফিস দেখেছে�? দেখে থাকল� টোবি ফ্ল্যান্ডারসনে� কথ� মন� আছ�? ঐয� এইচআরে� দায়িত্ব� থাকা লোকট�, দেখলেই ঘু�-ঘু� লাগে, জীবন� যা� একটামাত্রই উল্লেখযোগ্� ঘটনা ঘটেছিল—দ্য� স্ট্র্যাঙলার-এর বিচারে� ট্রায়াল� থাকা! না দেখে থাকলেও এইযে এই দফায� জেনে গেলেন। আমার জীবন� আসলে এমনই� জীবন� ‚ট্যুর� দিয়েছিলাম একটা�, আর সে� একখা� ট্যুরে� গল্প ভেঙে� যে বাকি জীবন পা� কর� দিতে হব� এই ব্যাপারে� আম� যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী� তো সে� ট্যুরে� সুবাদে� গিয়েছিলাম কাপ্তা� হ্রদ ভ্রমণে� নৌকা ছাড়ামাত্র সামনের দিকে� একটা পাটাতন� গিয়� আস্তান� গেঁড়ে ফেলি� পাদুটো পানিতে নামিয়� দিয়� সকাল বেলা� উঠতি রোদে� নিচে বস�, হ্রদের বাতা� খেতে খেতে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। কিছুদূ� যাওয়া� পর পানি� গভীরত� বাড়তে থাকে, ফ্যানাওঠ� পানি পরিষ্কার হয়ে আস�, নৌকাটা আরেকটুখানি বেশি ডুবে যায়, সাথে আমার� পাদুটো� আরেকটু ভালোমত� ভেজা� সুযো� পায়� জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা সকাল উপভো� করছিলাম। চারদিক� পানি, থেকে থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে দূরে� আশেপাশ� থেকে ভেসে আসছে পানি-কেটে নৌকা চলার শব্দ, বাতাসে� শব্দ, পাখি ওড়া� শব্দ! সকাল ক্ষয়ে যাচ্ছে আসন্� দুপু�-রোদে� তেজে� সেসব নিয়� আমাদের কোনো ভ্রুক্ষে� নেই। মনের আনন্দে বাতাসে� সাথে নিজেদে� বেসুরো কণ্ঠস্বর� গাওয়া গা� ভাসিয়� দিচ্ছি! আহ�! কী সুন্দর একটা দি�! কিন্তু সু� বরাবরে� মতোই খু� বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কোথা থেকে আরেকটা নৌকা আমাদের সা� ধর� ফেললো। সেখানে থেকে ভেসে আস� ভারতীয় সিনেমা� উদ্ভ�-উদ্ভ� আইটে� গানে� জোরে মন� হল� বাতাসও জায়গাটা থেকে পালিয়� গেল। কোথায় আমার বাতাসে� সু�, কোথায় আমার জলতরঙ্গে� ছন্দ আর কোথায় আমার অরণ্যানী� নির্মলতা! তারপ� যেয়� শুভল� ঝর্ণায� নামা� পরের বর্ণনা আশ� কর� � ���ায়গায় গত কয়ে� বছরে� মধ্য� যাওয়া কোনো মানুষক� বলতে হব� না! যেজন্য� এত কথা—সেই সময়� বিভূতিবাবু� ঠি� এম� কিছু� উপলব্ধ� করেছেন�
‟কিন্ত� প্রকৃতির এই অত্যাশ্চর্� সৌন্দর্যময� রাজ্যে দৈবা� যদ� আসিয়া� পড়িয়াছ�, দেখিবা� চো� না� আদৌ।�
আসলে কোনো বই নয়—এটা পুরোটা� একটা অভিজ্ঞতা, একটা জার্নি, একটা অন���ভূত�! বইতে দেশে� নৈসর্গিক যে সৌন্দর্যের বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তাতে কর� মাঝেমধ্য� মন� হয�, � কি আসলে� আমাদের উপমহাদেশ? কখনো মন� হয� এসবে� সাথে আমাদের চেনা পৃথিবী� কোনো যো� নে�; � অন্য কোনো পৃথিবী, অন্য কোনো জগ�! কিংব� আমার দেখা জগতট� বড্ড বেশি ছোটো তা�! কোনোদি� আমার এস� কথ� শুনে কে� হয়ত� বলেও বসবে�
“ভানুমত৶র পৃথিবী কতটুকু জানিতে বড� ইচ্ছ� হইল।�
“মাইলে� পর মাইল ব্যাপিয়� কা� � ঝাউব� বর্ষার জল� ভিজিতেছে, আমার আপিসঘরের বারান্দায় চেয়ার পাতিয়� বসিয়া দেখিতা�, আমার সামন� কাশবনে� মধ্য� একটা বনঝাউয়ে� ডালে একটা সঙ্গীহারা ঘুঘু বসিয়া অঝোর� ভিজিতেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্ট� একভাবে� বসিয়া আছ�-মাঝে মাঝে পালক উষ্কখুষ্� করিয়া ঝুলাইয়া বৃষ্টি� জল আটকাইবার চেষ্টা কর�, কখনো এমনি� বসিয়া থাকে�
এম� দিনে আপিসঘর� বসিয়া দি� কাটানো আমার পক্ষ� কিন্তু অসম্ভব হইয়� উঠিত� ঘোড়ায� জি� কষিয়া বর্ষাত� চাপাইয়া বাহি� হইয়� পড়িতাম। সে কি মুক্তি! কি উদ্দাম জীবনানন্�! আর, কি অপরূ� সবুজের সমুদ্র চারিদিকে-বর্ষার জল� নবী�, সতেজ, ঘনসবুজ কাশে� বন গজাইয়� উঠিয়াছে-যতদূ� দৃষ্টি চল�, এদিক� নাঢ়�-বইহারে� সীমানা ওদিক� মোহনপুরা অরণ্যে� অস্পষ্� নী� সীমারেখা পর্যন্� বিস্তৃ� থৈ থৈ করিতেছ�-এই সবুজের সমুদ্র-বর্ষাসজল হাওয়ায় মেঘকজ্জল আকাশের নিচে এই দীর্� মরকতশ্যা� তৃণভূমির মাথায় ঢে� খেলিয়� যাইতেছ�-আম� যে� এক� � অকূল সমুদ্রের নাবি�-কোন্ রহস্যময় স্বপ্নবন্দরে� উদ্দেশ� পাড়� দিয়াছি।
এই বিস্তৃ� মেঘচ্ছায়াশ্যামল মুক্� তৃণভূমির মধ্য� ঘোড়� ছুটাইয়া মাইলের পর মাইল যাইতাম-কখনো সরস্বতীকুণ্ডী� বনের মধ্য� ঢুকিয়� দেখিয়াছ�-প্রকৃতির এই অপূর্ব নিভৃ� সৌন্দর্যভূমি যুগলপ্রসাদের স্বহস্তে রোপি� নানাজাতীয় বন্য ফুলে � লতায� সজ্জিত হইয়� আর� সুন্দর হইয়� উঠিয়াছে� সমগ্� ভারতবর্ষের মধ্য� সরস্বতী হ্রদ � তাহা� তীরবর্তী বনানী� মত� সৌন্দর্যভূমি খু� বেশি না�-� নিঃসন্দেহে বলতে পারি� হ্রদের ধারে রে� ক্যাম্পিয়নে� মেলা বসিয়াছে এই বর্ষাকাল�-হ্রদের জলের ধারে� নিকট� জল� ওয়াটারক্রোফটে� বড� বড� নীলা� সাদা ফুলে ভরিয়া আছে। যুগলপ্রসাদ সেদিনও কি একটা বন্যলত� আনিয়া লাগাইয়া গিয়াছ� জানি� সে আজমাবা� কাছারিতে মুহুরী� কা� কর� বট�, কিন্তু তাহা� মন পড়িয়� থাকে সরস্বতী কুণ্ডী� তীরবর্তী লতাবিতান� � বন্যপুষ্পে� কুঞ্জে।�
নৈসর্গ তাকে নিজস্বরূ� নিয়� ভাবায়, জীববৈচিত্র নিয়� ভাবায়, মানসপটের অন্ধকারাচ্ছন্ন কোটর থেকে ঘুরিয়� আনে।
“মানুষ� কি চায়- উন্নতি, না আনন্�? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদ� তাহাতে আনন্� না থাকে? আম� এম� কত লোকে� কথ� জানি, যাহারা জীবন� উন্নতি করিয়াছে বট�, কিন্তু আনন্দক� হারাইয়াছে� অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধা� ক্ষইয়� ক্ষইয়� ভোঁত�- এখ� আর কিছুতে� তেমন আনন্� পায় না, জীবন তাহাদে� নিকট একঘেয়�, একরঙ�, অর্থহীন। মন শা�-বাঁধান�-রস ঢুকিতে পায় না।�
“যেন এই নিস্তব্ধ, নির্জন রাত্রে দেবতার� নক্ষত্ররাজির মধ্য� সৃষ্টি� কল্পনায় বিভো�, যে কল্পনায় দূ� ভবিষ্যতে নব নব বিশ্বে� আবির্ভাব, নব নব সৌন্দর্যের জন্ম, নানা নব প্রাণে� বিকা� বীজরূপ� নিহিত। শুধু যে-আত্ম� নিরল� অবকা� যাপন কর� জ্ঞানে� আকুল পিপাসায়, যা� প্রা� বিশ্বে� বিরাটত্ব � ক্ষুদ্রত্বের সম্বন্ধে সচেত� আনন্দে উল্লসি�-জন্মজন্মান্তরে� পথ বাহিয়� দূ� যাত্রা� আশায� যা� ক্ষুদ্� তুচ্� বর্তমানে� দুঃখ-শো� বিন্দুবৎ মিলাইয়া গিয়াছে…স�-� তাঁদের সে রহস্যরূপ দেখিতে পায়� নায়মাত্মা বলহীনে� লভ্যঃ�
এভারেস্ট শিখর� উঠিয়া যাহারা তুষারপ্রবাহে � ঝঞ্ঝায� প্রা� দিয়াছিল, তাহারা বিশ্বদেবতা� এই বিরা� রূপক� প্রত্যক্� করিয়াছে…কিংবা কলম্বা� যখ� আজোরেস� দ্বীপে� উপকূলে দিনে� পর দি� সমুদ্রবাহি� কাষ্ঠখণ্ডে মহাসমুদ্রপারের অজান� মহাদেশের বার্তা জানিতে চাহিয়াছিলেন-তখ� বিশ্বে� এই লীলাশক্ত� তাঁর কাছে ধর� দিয়াছিল-ঘর� বসিয়া তামা� টানিয়� প্রতিবেশী� কন্যার বিবা� � ধোপা-নাপি� করিয়া যাহারা আসিতেছ�-তাহাদে� কর্ম নয� ইহার স্বরূপ হৃদয়ঙ্গ� করা।�
মানুষে� প্রকৃতির প্রত� কর� অন্যায� আর ধ্বংসযজ্ঞে� হতাশাময় আখ্যানের বিপরীতে বিভূতিবাবু তা� স্বভাবসুলভ আশার ছোঁয়া� রেখেছেন। যুগলপ্রসাদ চরিত্রের মধ্য দিয়� আমরা তব� একটুখানি আশ� খুঁজ� নিতে পারি� ধ্বংসলীলা� মধ্যেও কে� না কে� রক্ষাকর্তা� থাকব� নিশ্চয�!
“এ� জন্মান্ধ মানুষে� দেশে একজন যুগলপ্রসাদ কি করিয়া জন্মিয়াছি� জানি না—শুধ� তাহারই মুখে� দিকে চাহিয়� আজ� সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী অক্ষুন্ন রাখিয়াছি।�
যা দেখছ� � উপন্যা� নিয়� বলতে গেলে রা� শে� কর� ভো� কর� ফেলব� আম�! অথ� কতজনের কথাই তো বা� পড়ে গে�! ভানুমত৶ আর তা� পাহাড়� রাজত্ব, অভাগিনী মঞ্চ৶ আর তা� হিংলাজের মালাছড়া, দুঃখিনী বাঙালিবধ� কুন্তা� জীবন সংগ্রা�, রাজু পাঁড়ে� অনাড়ম্ব� প্রেমকাহিন�, মটুকনা� আর তা� টো�, শ্বাপদসংকু� মাঠে� মাঝে নকছেদী� নতুন সংসা�, নাচুনে ধাতুরিয়� আর তা� শিল্পানুরা�, ধাওতাল সাহু মহাজ� আর তা� অগাধ বিশ্বা�, সুরতিয়া আর তা� গুড়গুড়�, গীরিধারিলা�সহ আর� কতজনের গল্প� তো ছাড়� পড়ে গে�! সে থাক। সেসব বলতে নিলে দেবত� টাঁড়বার� এস� আমায� হা� দেখিয়� থামত� বলবে নির্ঘা�!
বইটা� অনেক অনেক অনেক ভালো রিভি� আছে। রিভি� লিখতেও চাইনি। কিছু আবেগ মস্তিষ্কের অদৃশ্য কালি� পরিবর্তে দৃশ্যমান হরফে দেখা� ইচ্ছ� হল� বলেই এত কথ� লিখলাম� বইটা শে� হওয়ার পর আমার� উদাস লেগেছে খুব। মন� হয়েছে প্রকৃতির সংস্পর্শ� আবেগতাড়িত হয়ে ভানুমতির মত� হয়ত� আমিও কোনোদি� বল� ফেলবো�
“বাবুজী, কল্কাত� থেকে আমার জন্য� একখানা আয়ন� এন� দেবে�? আমার আয়ন� একখানা ছি�, অনেক দি� ভেঙ্গে গিয়েছে।�